দিন দিন বেড়েই চলেছে করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত বিশ্বনেতাদের সংখ্যা। দীর্ঘ হতে থাকা এই তালিকায় সম্প্রতি যোগ হয়েছেন মার্কিন প্রিেসডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। গত সপ্তাহে সস্ত্রীক ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানান ৭৪ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্ট। নিচে করোনা সংক্রমণের শিকার হওয়া বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের একটি তালিকা তুলে ধরা হলো:
বরিস জনসন
বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে সবার আগে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। গত এপ্রিলে করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগে সমালোচনার মধ্যেই সংক্রমিত হন তিনি। আক্রান্ত হওয়ার পর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। এমনকি এক রাত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। অবশ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন পড়েনি তার।
পরবর্তীতে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের প্রতি নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন জনসন। উল্লেখ্য, বরিস জনসনের আগে বৃটিশ সিংহাসনের আপাত উত্তরসূরী প্রিন্স চার্লস গত মার্চে করোনা আক্রান্ত হন।
জাইর বলসোনারো
গত জুলাইয়ে নিজের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর জানান ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। করোনার চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের পক্ষে কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। করোনার চিকিৎসায় ওষুধটির কার্যকারিতার পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও, তিনি নিজে ওষুধটি গ্রহণ করেন। এর আগে, ব্রাজিলে করোনার বিস্তার শুরুর পর প্রথম চার মাস ভাইরাসটিকে একটি ‘ছোটোখাটো ফ্লু’ বলে উড়িয়ে দেন তিনি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য সংক্রমণবিরোধী স্বাস্থ্যবিধি না মানার পক্ষেও কথা বলেন। মাস্ক না পরে যোগ দেন শত শত মানুষের বিক্ষোভে।
হুয়ান অরলান্দো হারনান্দেজ
হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট হারনান্দেজ করোনা আক্রান্ত হওয়ার কথা জানান গত জুনে। তার ঘনিষ্ঠ দুই সহযোগীও আক্রান্ত হয়েছিলেন একই সময়। হারনান্দেজ জানান, করোনার চিকিৎসা হিসেবে পরীক্ষামূলক ‘মায়িজ চিকিৎসা সেবা’ নেওয়া শুরু করেছেন তিনি। যদিও ওই চিকিৎসা পদ্ধতি করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর কিনা, তা অপ্রমাণিত। স্বল্প সময়ের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে। এরপর থেকে বিশ্বজুড়ে করোনার টিকা সহজলভ্য করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন তিনি। সম্প্রতি জাতিসংঘে বিশ্বনেতাদের জমায়েতে তিনি প্রশ্ন তোলেন, মানুষজনকে কি মরে যাওয়ার জন্য ফেলে রাখা হবে?
আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো
করোনা নিয়ে উদ্বেগকে ‘মানসিক ব্যাধি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো। ভাইরাসটি থেকে সুরক্ষিত থাকতে ভদকা পানের পরামর্শও দিয়েছিলেন। তবে তাতে রেহাই মেলেনি। জুলাইয়ে নিজেই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানান তিনি। বিশ্বের যে কয়টি দেশ করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বিস্তৃত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, বেলারুশ সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। বেলারুশ ছাড়া, সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যান্য সাবেক সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান ও রুশ প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিনও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
মোনাকোর প্রিন্স আলবার্ট দ্বিতীয়
ভূমধ্যসাগরীয় ছোট দেশ মোনাকোর শাসক প্রিন্স আলবার্ট দ্বিতীয় গত মার্চে করোনা সংক্রমণের শিকার হন। তবে দেশটির কর্তৃপক্ষ তখন জানিয়েছিল যে, আক্রান্ত হলেও তার স্বাস্থ্যের অবস্থা উদ্বেগজনক নয়।
আলেহান্দ্রো জিয়ামাতেই
সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত হওয়ার কথা জানান গুয়াতেমালার প্রেসিডেন্ট জিয়ামাতেই। সে সময় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার উপসর্গগুলো অত্যন্ত মৃদু। এখন অবধি আমার কেবল শরীর ব্যথা আছে। এটা গতকালকের চেয়ে বেড়েছে। তীব্র ঠাণ্ডা লাগার মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছে। আমার জ্বর নেই তবে, হালকা কাশি আছে। তিনি আরো জানান, তিনি বাড়ি থেকে কাজ করছেন।
জিনাইন আনেজ
গত জুলাইয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে যান বলিভিয়ান প্রেসিডেন্ট। তবে তিনি জানিয়েছিলেন, শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ বোধ করছেন।
লুইস আবিনেডার
গত জুলাইয়ে দেশে নির্বাচনের আগ দিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন ডমিনিকান রিপাবলিকের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লুইস আবিনেডার। নির্বাচনের আগে কয়েক সপ্তাহ আইসোলেশনে ছিলেন তিনি।
ইরান
মধ্যপ্রাচ্যে করোনা সংক্রমণের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ইরানে একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসহাক জাহাঙ্গিরি, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুমেহ এবতেকার। এছাড়া, মন্ত্রিপরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্যও সংক্রমিত হয়েছেন।
ভারত
ভারতে সম্প্রতি ভাইস প্রেসিডেন্ট এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু (৭১) করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন। তবে তার কার্যালয় জানিয়েছে, নাইডুর মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার কোনো উপসর্গ নেই। তিনি নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে আছেন। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত মাসে করোনা আক্রান্ত হন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। জুনিয়র রেলমন্ত্রী সুরেশ আঙ্গাদি গত সপ্তাহে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
ইসরাইল
গত এপ্রিলে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন ইসরাইলের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়াকভ লিটজম্যান। পরবর্তীতে সুস্থ হয়ে উঠেন তিনি। ইসরাইলের উগ্র-গোঁড়া সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতা লিটজম্যান। এ সম্প্রদায়ের মধ্যে করোনার প্রকট সংক্রমণ দেখা গেছে। ইসরাইলে অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে জেরুজালেম বিষয়ক মন্ত্রী রাফি পেরেটজও করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী নসিভিওয়ি মাপিসা-এনকাকুলা, খনিজ সম্পদ ও জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী গুয়েদে মানতাশি এবং শ্রমমন্ত্রী থুলাস নক্সেসি গত জুন ও জুলাই মাসের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হন ।
দক্ষিণ সুদান
দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাচারসহ মন্ত্রিপরিষদের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
গাম্বিয়া
গত জুলাইয়ে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসাতৌ তৌরায়, অর্থমন্ত্রী, জ্বালানিমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী আক্রান্ত হন।
গিনি-বিসাউ
দেশটির প্রধানমন্ত্রী নুনো গোমসনাবিয়াম গত এপ্রিলে করোনা আক্রান্ত হন।
(বার্তা সংস্থা এপি অবলম্বনে।)
Leave a Reply